Posted: ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, হাবিপ্রবি, দিনাজপুর: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ পালিত হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮.২০ মিনিটে মাননীয় ভাইস—চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. সাইফুর রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মামুনুর রশীদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ মাহাবুব হোসেন। এরপর মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। কালো ব্যাচ ধারণ শেষে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান এর নেতৃত্বে ২১ শে ফেব্রুয়ারি ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে প্রভাত ফেরি পুরো ক্যাম্পাস ও এর সামনের মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। প্রভাত ফেরিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মাননীয় ভাইস—চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহিদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন। ক্রমান্বয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ডিনগণ, শিক্ষকবৃন্দের বিভিন্ন সংগঠন, কর্মকর্তাবৃন্দের সংগঠন, হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ—এর নেতৃবৃন্দ, কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এরপর শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় ভাইস—চ্যান্সেলর এর বাণী বিতরণ করা হয়। বাণীতে মাননীয় ভাইস—চ্যান্সেলর বলেন, আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি আজকের এই দিনে এ দেশের ছাত্র জনতা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রাজপথে। ১৯৪৭—এর দেশ ভাগের পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সর্বস্তরে উর্দুকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা—সংস্কৃতি ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। কিন্তু পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর কন্ঠে একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উচ্চারিত হলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর নেতৃত্বে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সর্বপ্রথম অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে যে আন্দোলনের সূচনা তার পূর্নতা প্রাপ্তি ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। আজকের এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি ভাষা শহীদ রফিক, শফিক, বরকত, সালাম, জব্বারদের প্রতি যাঁরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তানী শাসকদের বুলেটে ঢাকার রাজপথে আত্মদান করেছিলেন। বাঙালির গৌরব ও গর্বের একুশে ফেব্রুয়ারি এখন পৃথিবীর সকল জাতি গোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে স্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে উদযাপিত হচ্ছে। বিশ্ববাসীর কাছে একুশ এখন ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ের অনন্ত প্রেরণার উৎস। প্রসঙ্গত বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর ভূমিকায় ইউনেস্কোতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়ে গৃহিত হয়েছিল। বিশ্বের সব ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য তিনি ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার উপর গবেষণা কার্যক্রম চলছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার এই অনন্য সাধারণ ভূমিকার জন্য তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
বাণী বিতরণ শেষে ৯.৪০ মিনিটে টিএসসি প্রাঙ্গণে শিশুদের চিত্রাঙ্কন (শহিদ মিনার ও ভাষা আন্দোলনের উপর) প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে “ভাষা আন্দোলন, বাঙালি জাতিসত্ত্বা ও স্বাধীনতা” শীর্ষক স্বহস্তে লিখিত রচনা প্রতিযোগিতা এবং”আবৃত্তি ও দেশাত্মবোধক গানের” প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। সকাল ১১.৩০ মিনিটে সকল প্রতিযোগিতাসমূহের বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এছাড়া বাদ জোহর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা শহিদ ও সকল শহিদগণের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।