হাবিপ্রবিতে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সমাবর্তন ২০২৫
Posted: ২২ নভেম্বর ২০২৫, হাবিপ্রবি, দিনাজপুর



বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় সমাবর্তন-২০২৫।





আজকের দিনটি হাবিপ্রবির ইতিহাসে গর্ব ও অর্জনের এক স্মরণীয় দিন। রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরে হাজারো গ্র্যাজুয়েট, অভিভাবক, অতিথি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিণত হয় উৎসব ও উদ্দীপনার মিলনস্থলে। দিনটি উপলক্ষ্যে দুপুর ১.৩০টায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এঁর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সমাবর্তন প্যান্ডেলে আগমন করে এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠশেষে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কর্তৃক সমাবর্তন উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। মূল পর্বে সভাপতিত্ব করেন মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের মাননীয় বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।





অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন হাবিপ্রবির মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা। এরপর স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিন কর্তৃক গ্র্যাজুয়েটগণকে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার সমীপে উপস্থাপন এবং মহোদয় কর্তৃক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ডিগ্রি প্রদান শেষে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় কর্তৃক “চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক” প্রদান করা হয়। পরাবর্তীতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন হাবিপ্রবির ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার, আরও বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান। পরবর্তীতে ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক “ভাইস- চ্যান্সেলর পদক” প্রদান করা হয়।





সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতি মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সি. আর. আবরার তাঁর বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে যাঁর নামে এ বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশের উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সেই ব্রিটিশবিরোধী তেভাগা আন্দোলনের পথিকৃৎ হাজী মোহাম্মদ দানেশের স্মৃতিকে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদী শক্তির দমননীতি অতিক্রম করে শিক্ষার্থীরা যে সাহস, মনোবল ও দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছে তা ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে





তিনি বলেন "দেশ আজ নতুন সূচনার পথে। দীর্ঘ দেড় দশকের দমন-পীড়নের অবসান ঘটিয়ে আমরা একটি মুক্ত ও প্রাণবন্ত পরিবেশে ফিরেছি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।" তিনি আরও বলেন, “শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে আমাদের শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ, প্রতিবাদ ও নেতৃত্ব জাতিকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিয়েছে।” উচ্চশিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও যুগোপযোগী গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন “দেশের সীমিত সম্পদের মধ্যেও গবেষণা উন্নয়নে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে।”





তিনি শিক্ষকবৃন্দকে গবেষণা জোরদার করা, শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা এবং নতুন জ্ঞানের অনুসন্ধানে আরও অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের উদ্দেশে তিনি বলেন “১৮ কোটি মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের কাছে একটি পবিত্র আমানত। প্রশাসনিক, আর্থিক ও একাডেমিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।” তিনি শিক্ষা ও গবেষণার সব ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা, সততা এবং নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। নবীন গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন “এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে আপনাদের শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম। দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবিক সমাজ নির্মাণে তোমরাই হবে অগ্রপথিক।”





সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বাংলাদেশের মাননীয় বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আজ আপনাদের সামনে দাঁড়ানো আমার জন্য এক বিশাল সম্মানের বিষয়। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) এই সমাবর্তন-ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত সম্মানিত ও কৃতজ্ঞ। আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অথবা অনুপস্থিত সকল সম্মানিত অভিভাবকদের প্রতি বলছি, এই করতালি আপনাদের জন্য। ছাত্রদের আজ এই ডিগ্রি অর্জন আপনাদের ত্যাগ, আপনাদের নির্ঘুম রাতযাপন এবং সন্তানদের সম্ভাবনার প্রতি আপনাদের অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আপনারা সন্তানদের মধ্যে পারিবারিক আবহে আচার-ব্যবহার, সততা ও নৈতিকতার চর্চার যে ভিত্তি শৈশবে স্থাপন করে দিয়েছিলেন, তারই প্রভাব ও ফলাফল হিসেবে আজ তারা তাদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ডিগ্রি হিসেবে অর্জন করেছে। আজ সকল গ্র্যাজুয়েটের পিতামাতাকে, বিশেষ করে তাদের মায়েদেরকে, আমি আমার পক্ষ থেকে বিনম্র অভিবাধন জ্ঞাপন করছি। উপস্থিত গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের অনেকের কাছে আজকের এই দিনটিকে হয়তো জীবনের একটি পর্বের সমাপ্তি রেখা বলে মনে হচ্ছে। চার বছর, পাঁচ বছর, কখনও তারও বেশি সময় ধরে আপনারা আজকের এই একটি মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলেন। জীবনের সেই নিরলস চালিকাশক্তিই আপনাদের এখানে নিয়ে এসেছে এবং এই অর্জনকে বাকি জীবন নিজের মধ্যে এভাবেই লালন করা উচিত। তবে একটি জরুরি সত্য উপলব্ধির কথা বলে রাখি: এই ডিগ্রি কোনো সমাপ্তি রেখা নয়; এটি একটি প্রবেশদ্বারমাত্র। আপনাদের এই ব্যাচের পরিচয় কেবল অ্যাকাডেমিক সাফল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইতিহাস সাক্ষী, আপনারা কেবল জ্ঞানের সিঁড়ি বেয়ে ওঠেননি; আপনারা নিজ হাতে এই রাষ্ট্রের ইতিহাসের চাকাও ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে খুব বেশি দূরে নয় শহীদ আবু সাঈদ-এর ক্যাম্পাস-যেখান থেকে শুরু হয়েছিল তারুণ্যের সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, যা পুরো দেশকে ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়ে তুলেছিল। শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, রিয়া গোপ প্রমুখ এবং তাদের মতো আরও অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগ ও আহতদের প্রাত্যহিক জীবনদহন হলো জুলাই বিপ্লবের মূর্ত প্রতীক। তিনি আরও বলেন, আপনাদের দক্ষতা এবং আপনাদের জীবনবোধের সাথে উদার হোন। যখন আপনারা পেশাগত সাফল্য অর্জন করবেন, তখন পিছনের দরজা খুলে দিন। পরবর্তী প্রজন্মকে পরামর্শ দিন, তাদের জন্য বিনিয়োগ করুন ও তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন। পরিশেষে, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, আমাকে এই মহতী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আপনাদের মাঝে এসে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।





মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ এ গণবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা কাঙ্খিত বিজয় অর্জন করি। ’৭১ -এ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান “স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ” আর ’২৪ এর গণঅভ্যূত্থানে অর্জিত ফ্যসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ- এর পূণর্গঠন, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও নিরাপত্তার কারিগর বা কান্ডারি হবেন আমাদের প্রিয় গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছার তীব্র আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে প্রতিটি পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে লব্ধ জ্ঞান ও গবেষণা আপনাদের অত্যন্ত সহায়ক হবে। ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় উপদেষ্টা মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, উত্তরবঙ্গের স্বনামধন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দুই যুগ অতিক্রম করলেও সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছে বলে প্রতিয়মান। বিগত সরকারের উদাসীনতা এবং পর্যাপ্ত বাজেট স্বল্পতার দরুণ শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য যুগোপযোগী অবকাঠামো, একাডেমিক ভবন এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ গবেষণাগার অদ্যবধি নির্মিত হয়নি। এখনো সিংহভাগ শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত, বিশেষ করে ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে অত্যন্ত কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী। তাই আমি এ ব্যাপারে আপনার ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগীতা একান্তভাবে কামনা করছি। তিনি আরও বলেন, হাবিপ্রবির ২য় সমাবর্তনের প্রিয় সমাবর্তনীদের অনাগত দিনগুলো ভরে উঠুক অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিতে, দীর্ঘ জীবনের পদে পদে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সর্বত্র। আপনাদের মেধা ও কর্মের মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রমাণিত হউক “হাবিপ্রবিয়ান ও হাবিপ্রবিই” দেশ সেরা। উল্লেখ্য যে, এবারের দ্বিতীয় সমাবর্তনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে আট হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ডিগ্রী অর্জন করেন।



News and Events

winwin winwin winwin winwin winwin bongda tv winvn SEN88 D9BET
slot pulsa . https://bakeryrahmat.com/ slot demo https://nvmslot898chat.com rajatoto